Saturday, 27 August 2016

♥অবুঝ ভালোবাসা♥



পার্ট-১
এসো হাত ধরো হাতে, চলো অন্তহীন পথে, এসো তুমি, আর আমি, দু’চোখে স্বপ্ন হয়ে নামি… “ঐ থাম, হইসে। শাহবাগ মোড়ে এইভাবে চিৎকার করিস, ভালো ভিক্ষা পাবি। আমার কানের কাছে না।“ অপ্রস্তুত হয়ে থেমে গেলাম আমি। এই মেয়েটার মুখে কিছুই আটকায় না। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। কিন্তু আজও অভ্যস্ত হতে পারিনি। আমি অবশ্য কথা না বাড়িয়ে মুখ কুঁচকে পাশে সরে গেলাম । আজ পেত্নীটার মন খারাপ। ওর জানের জান আরেফিনের আজ জন্মদিন।ক্লাস টেনে পড়ার সময়ই “প্রেম-প্রীতি” নামক বিদ্যায় বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছিলো আমার এই “পেত্নী”। আরেফিন নামের এক গিটারিস্ট এর প্রেমে পড়ে যায়, বলতে গেলে, কোনোরকম সতর্কীকরণ বার্তা ছাড়াই।তারপর আর কি ! মায়ের মোবাইলে লুকিয়ে লুকিয়ে ওর সাথে কথা বলতো। আর কি নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা! প্রতিদিন আমার কাছে এসে আরেফিনের সাথে কি কথা হতো, সব বলতো! আরেফিন কি খেতে পছন্দ করে, কি রঙ ওর বেশি পছন্দ, ও কতো ভালো গিটার বাজাতে পারে, এসব শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেলো। প্রতিদিনই বলতাম, “তোর এই আরেফিনের প্যাঁচাল বন্ধ করতো।” তখন ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলতো,“আমার আরেফিন এর কথা, আমি বলবো, না তো কি বাইরের মানুষ বলবে? আর তোকে বলি কারণ তুই একটা গাধা, একটা গার্ল ফ্রেন্ড জুটাইতে পারলি না, ছাগল… আয়নার দিকে তাকায়া দেখছিস কোনোদিন, তোর কান গুলা পুরা খরগোস এর মতো………আর হাসলে………” “আল্লাহর দোহাই লাগে, তুই থাম, যেভাবে বলছিস, মিরপুর চিড়িয়াখানার লোকজন কেউ শুনতে পেলে নির্ঘাত আমাকে ধরে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ভরে রাখবে…তার থেকে বরং “তোর আরেফিন” এর প্যাঁচাল শুরু কর, শুনছি।” কথাগুলো বলেই প্রমাদ গুনলাম, না জানি এখন কত কিলোমিটার লম্বা ঝাড়ি শুনতে হয়। কিন্তু আমাকে অনেকটা অবাক করে দিয়েই হেসে উঠলো পেত্নীটা। আস্তে করে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, এতো সুন্দর করেও মানুষ হাসতে পারে !!!
কি কথা বলতে গিয়ে কোথায় চলে এসেছি, হায়রে কপাল। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। আমি আর পেত্নী বসে আছি টি, এস, সি তে। আমার হাতে এক প্যাকেট টিসু পেপার । পেত্নী ফোঁপাচ্ছে, আর আমার দায়িত্ব হচ্ছে একটু পরপর ওর হাতে টিসু ধরিয়ে দেওয়া, আর ওর নাক ঝাড়ার দৃশ্য দেখা। শুধুমাত্র এই কাজের জন্য সকাল আটটায় আমার অতি প্রিয় ঘুম ভাঙ্গিয়ে এনেছেন পেত্নী বিবি। এই “আরেফিন” নামটা আমি একেবারেই সহ্য করতে পারিনা, এটা জেনেই বোধহয় আমাকে দিয়েই এসব কাজ করায়। ওর মন ভালো করার জন্যই গান গাইতে গিয়ে ঝাড়ি খেলাম, ওর বোধহয় আমার কাঁচুমাচু মুখ দেখে একটু মায়া হল। ফোঁপাতে ফোঁপাতেই জিজ্ঞেস করলো, “রাতে খেয়েছিলি?” “হু।”(মিথ্যে কথা, সত্যটা বলে আবার ঝাড়ি খাওয়ার কোন মানে হয় না) “ঘুমাইছিস কয়টায়?” “১১ টা।”(সত্য কথা) “১১ টা বাজে ঘুমালে এত হাই মারিস কেন? অসভ্যের মতো?” “হাই মারাতে অসভ্যতার কোন এলিমেন্ট আছে বলে আমার জানা নেই।” (আবার হাই তুললাম, এবার নকল হাই) “দাঁত মাজছিস সকালে?” নকল হাই এর মাঝপথে এসে থেমে গেলাম, দাঁত মাজি নি। দাঁত মাজার মতো ফালতু কাজে আমার মতো ব্যস্ত! মানুষের আবার টাইম কই ? আমাকে চুপ থাকতে দেখেই যা বুঝার বুঝে নিলেন, পেত্নী মহাশয়া… “ইয়াক থু” করে বলল, “এ জন্যই ভাবছিলাম, এতো দুর্গন্ধ আসছে কোত্থেকে… ইয়াক থু” করে সত্যি সত্যি একদলা থুথু আমার পায়ের কাছে ফেললো।। মনে মনে ভেবে পেলাম না, আমি স্বীকার করার পর পরই গন্ধ ছড়াল??? “ব্রেকফাস্ট তো করিস নাই। চল, কোন এক রেস্টুরেন্টে ।” কিছু না বলে, সায় দিলাম মাথা নেড়ে। পেত্নীটাও, যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব করে উঠে দাঁড়ালো। এতক্ষণ যে ফোঁপাচ্ছিল, দেখে বোঝার উপায়ই নেই। এখনো বুঝতে পারিনা মেয়েটাকে। আচ্ছা, ও কাঁদছিল কেন আর আরেফিনই বা কোথায়, সে কথা কি বলেছি? মনে হয় না। কারণ, সেটা “ইট ওয়াজ এ লং স্টোরি” টাইপ ঘটনা। সংক্ষেপে জানিয়ে রাখি, আরেফিন, আমার পেত্নীর সাথে কথা বলে, সময় কাটাত, আর কিছুই নয়। আমরা যেটাকে বলি “টাইম পাস”। আর এ কথা যেদিন জানতে পারে ও, সেদিন আমার কাছে এসে সমগ্র পুরুষ জাতিকে তুলে শাপশাপান্ত করতে লাগলো। এরপর থেকে আর আমাকে “আরেফিনের প্যাঁচাল’ শুনতে হয় নি। তবু ছয় বছর ধরে মাঝে মাঝে পুরানো কথা মনে পরে, পেত্নী মহাশয়ার।। আর তা শুনতে হয়, আমাকেই। আমি হাই তুলতে তুলতে টিসু তুলে ধরি। বিনিময়ে ফ্রি ব্রেকফাস্ট পাই, খারাপ কি? (আমার পেত্নী, আমার পেত্নী করছি কেন? শোধ নিচ্ছি বলতে পারেন, ও আগে ‘আমার আরেফিন’ বলতো সেটার শোধ। হে হে হে) আরেফিন চ্যাপ্টার ক্লোজ… অসহ্য। আমার ভাষায়, “হালায় পেইন একটা”। পেত্নীর নাম এখনো বলি নি… দরকারই বা কি বলুন! ধরে নিন আমার পেত্নীর নামই পেত্নী!!! এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, আমি এই “মুখে কোন কথা আটকায় না” টাইপ মেয়েটিকে অনেক ভালবাসি …! আজকাল নয়। যখন আমাদের বয়স ৮, তখন থেকেই আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, বড় হয়ে এই পেত্নীটাকেই বিয়ে করবো। সাধারণত ছোটবেলার ভাবনা- চিন্তাগুলা ছোটবেলাতেই শেষ হয়ে যায়, আমার ক্ষেত্রে হয়নি। কেন যে হয়নি সেটা ভেবেই আমি অবাক হয়ে যাই। একটা দিনও ঠিকমত কথা বলতো না, কি একটা ‘ভাব’ যে মারে আমার সাথে! ছোটবেলা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যতবার ই ‘প্রিয় বন্ধু’ নিয়ে রচনা লিখতে গিয়েছি,প্রিয় বন্ধু হিসেবে আমি লিখেছি ওর নাম, আর ও লিখেছে আমার নাম, কিন্তু আমাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। তারপরও আমি ওর পিছে লেগে ছিলাম … । কেন? জানি না। হয়তো ভালোবাসি, তাই।

No comments: